
সিরাজ মিয়া মহাজন

সিরাজ হত্যা মামলার আসামি আব্দাল হোসেন
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়ন একটি অঘোষিত সন্ত্রাসী শাসনের কবলে। ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দাল হোসেন, যিনি ১৯৯৬ সালের সিরাজ হত্যা মামলার আসামি, আজও টানা দুইবার চেয়ারম্যানের পদে বহাল আছেন। খুন, চোখ উপড়ে অন্ধ করা, ডাকাতি, সরকারি সম্পদ লুট, নারী নির্যাতন, কোটি কোটি টাকা পাচারসহ অসংখ্য অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনের নীরবতা তাঁকে বেপরোয়া করেছে।
১৯৯৬ সালের ৬ অক্টোবর, রোজ রবিবার, খাঁসিয়া পান পুঞ্জি থেকে মোটরসাইকেলযোগে আদমপুর বাজার ফেরার পথে কাউয়ারগলা গ্রামের আব্দাল হোসেনের এলাকায় সিরাজ মিয়া মহাজনকে আটক করে রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করেন। হত্যার কয়েকদিন আগে সিরাজ কমলগঞ্জ থানায় আব্দাল হোসেনের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। সিরাজ মহাজন ছিলেন উত্তর কানাইদেশী (টিলাগাঁও) গ্রামের বাসিন্দা এবং আদমপুর বাজারের খাসিয়া পুঞ্জীর আড়ৎদার।
নিহতের ছোট ভাই সিদ্দেক হোসেন মামলা দায়ের করলে আব্দাল হোসেন আওয়ামী লীগের সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদের সহযোগিতায় হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন। মামলাটি আজও বাংলাদেশ হাইকোর্টে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। এরপরও তিনি নির্বিঘ্নে টানা দুইবার চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
শুধু সিরাজ হত্যাই নয়, তিনি স্থানীয় বনগাঁও গ্রামের দিনমজুর আজাদ মিয়াকেও ডাকাত আখ্যায়িত করে দু’চোখ উপড়ে অন্ধ করে দিয়েছেন। আজাদ এখন খুবই অসহায় অবস্থায় ভিক্ষা করে জীবনযাপন করছেন।
নির্যাতন ও সন্ত্রাসের পাশাপাশি, আব্দাল হোসেনের রাজনৈতিক, সামাজিক ও আর্থিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে লেখালেখি ও প্রতিবাদ করায় তিনি যুক্তরাজ্য প্রবাসী শফিকুর রহমানকেও হত্যার হুমকি প্রদর্শন করেছেন। হুমকিতে বলা হয়েছে—“অতীতের সিরাজ মহাজন হত্যা এবং আজাদ মিয়ার মতো অবস্থা তোমারও করা হবে।” তাঁর ছোটভাই আফজল হোসেনও ফেসবুকে শফিকুর রহমানকে নিয়ে মানহানিকর লেখালেখি করেছেন এবং দেশে গেলে তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
পাশাপাশি আব্দাল হোসেন দেশে-বিদেশে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। তিনি মৌলভীবাজার শহরে একটি চক্ষু হাসপাতালসহ অবৈধ অর্থ বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করে ব্যবসা চালান। পাশাপাশি তিনি ও তার আমেরিকা প্রবাসী ছোটভাই আফজল হোসেন পারিবারিক সম্পর্কের জেরে আওয়ামী লীগের অবৈধ কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদের বিপুল অর্থ আমেরিকায় পাচারে সহযোগিতা করেন।
এছাড়াও আব্দাল হোসেনের বিরুদ্ধে সরকারি গাছচুরি, নারী ধর্ষণ, সরকারি বনায়ন প্রকল্প বিক্রি, ডাকাতি, কোটি কোটি টাকা পাচারসহ আরও অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। প্রশাসন এসব বিষয়ে নীরব রয়েছে, আর তিনি দাপটের সঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনা করছেন।
স্থানীয়রা বলছেন—“একজন খুনি, সন্ত্রাসী ও লুটেরা কীভাবে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বহাল থাকতে পারে? প্রশাসন কি ইচ্ছাকৃতভাবে চোখ বন্ধ করে রেখেছে?”
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ শফিকুর রহমান