
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর
ঢাকা, ৩১ আগস্ট ২০২৫ – গত শুক্রবার (২৯ আগস্ট) রাত ৯:৩০–১০:০০টার দিকে রাজধানীর কাকরাইল এলাকায় জাতীয় পার্টির (জাপা) কার্যালয়ের সামনে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর (ভিপি নুর) গুরুতরভাবে আহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওই সময় জাপা কার্যালয় প্রাঙ্গণে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছিল, কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার নামে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অতিমাত্রায় শক্তি প্রয়োগ করে এবং সেনা ও পুলিশ যৌথভাবে ভিপি নুরকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। প্রথমে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাকে ঘিরে মারধর করে, পরে স্থানীয় এক যুবককে সামনে ঠেলে দেওয়া হয়, যে মাটিতে লুটিয়ে পড়া নুরকে লাথি-ঘুষি মেরে রক্তাক্ত করে। এভাবে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদে প্রকাশ্য সন্ত্রাসী কায়দায় হামলার ঘটনা ঘটেছে, যা শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমন নয় বরং এক ধরনের ভয়ঙ্কর বার্তা – জনগণ ও ভিন্নমতের নেতারা কেউ আর নিরাপদ নয়।
রক্তাক্ত অবস্থায় নুরকে দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকেরা জানান, তার নাক ও চোয়ালের হাড় ভেঙে গেছে, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে এবং চোখে রক্ত জমাট বেঁধেছে। এত গুরুতর আঘাতের কারণে নুরের অবস্থা শঙ্কাজনক, এবং পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত তিনি আশঙ্কামুক্ত থাকবেন কিনা তা বলা যাচ্ছে না। এক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেছেন, একজন শীর্ষ রাজনীতিবিদের ওপর রাষ্ট্রীয় বাহিনীর প্রত্যক্ষ আক্রমণ বাংলাদেশের জন্য গভীর অশনি সংকেত, কারণ এটি রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে সরাসরি জীবন-মরণ লড়াইয়ে পরিণত করেছে।
এই নৃশংস হামলার প্রতিবাদে দেশব্যাপী গণ অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন। কিশোরগঞ্জ, ঝিনাইদহ ও বরিশালে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রথমে সেনা ও পুলিশ হামলা চালায়, এরপর জাতীয় পার্টির লোকজন তাকে মারধর করে। বরিশালের এক সমাবেশে নেতারা অভিযোগ করেন, নুরকে যখন মাটিতে ফেলে নির্দয়ভাবে পেটানো হচ্ছিল তখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কেবল মুচকি হাসি দিয়েছে, যা তাদের সম্পৃক্ততা আরও স্পষ্ট করে। বক্তারা অবিলম্বে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেন এবং সুষ্ঠু তদন্ত না হলে দেশব্যাপী কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন।
ভিপি নুর ২০১৮ সালের ঐতিহাসিক কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে জাতীয়ভাবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। সেই থেকেই তিনি বারবার হামলা ও মামলার শিকার হয়েছেন। তবে এবারকার হামলাকে তার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ ও পরিকল্পিত আক্রমণ বলে মনে করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সেনা ও পুলিশের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে আরও ভয়ঙ্কর করে তুলেছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃত্ব আহত হওয়া গণতন্ত্রের জন্য এক অশনি সংকেত, যা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ধ্বংস করে দিচ্ছে।
বাংলাদেশ এখন এমন এক ভয়াল সময়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ভিন্নমত দমন করতে সরাসরি সহিংসতার আশ্রয় নিচ্ছে। জনগণের ভোটাধিকার ও বাকস্বাধীনতা ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। ভিপি নুরের ওপর হামলা তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ, যা প্রমাণ করে – রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত বাহিনীই আজ জনগণের শত্রুতে পরিণত হয়েছে। এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা আরও তীব্র আকার ধারণ করবে এবং দেশ ভয়ঙ্কর অস্থিতিশীলতার দিকে ধাবিত হবে।
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ শফিকুর রহমান
One thought on “সেনা-পুলিশের ভয়াবহ হামলায় রক্তাক্ত ভিপি নুর”