চট্টগ্রামে জশনে জুলুসে পদদলিত: রহস্য ঘিরে আওয়ামী লীগের অশুভ ছায়া

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জশনে জুলুসে এবছর যে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটল, তা শুধু একটি দুর্ঘটনা নাকি এর পেছনে রয়েছে পরিকল্পিত কোনো অশুভ শক্তির হাত—এই প্রশ্ন এখন সাধারণ মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। শনিবার দুপুরে মুরাদপুর মোড়ে লাখো মানুষের অংশগ্রহণে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে আয়োজিত শোভাযাত্রায় হঠাৎই ভয়াবহ বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে গরমে অসুস্থ হয়ে কয়েকজন পড়ে গেলে মুহূর্তেই তা পদদলিত হওয়ার মতো ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি করে। ঘটনাস্থলেই দু’জন প্রাণ হারান—৬০ বছর বয়সী আইয়ুব আলী এবং মাত্র ১৩ বছরের কিশোর সাইফুল ইসলাম। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও পাঁচ থেকে ছয়জন, যাদের মধ্যে একজন এখনো আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, অস্বাভাবিক চাপ ও ভিড় সৃষ্টির পেছনে ছিল রহস্যজনক বিশৃঙ্খলা। অনেকেই বলছেন, সড়কের একাধিক মোড়ে হঠাৎ করে স্বেচ্ছাসেবকদের সরিয়ে দেওয়া হয়, যা পুরো জনস্রোতকে অনিয়ন্ত্রিত করে তোলে। অনেকে সন্দেহ করছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একটি অংশ ইচ্ছাকৃতভাবে এই জুলুসকে বিপর্যস্ত করার ষড়যন্ত্রে নেমেছিল। কারণ, চট্টগ্রামের এই ধর্মীয় ঐতিহ্য বহু বছর ধরেই সরকারের নিয়ন্ত্রণ-বহির্ভূত একটি শক্তিশালী গণআন্দোলনের প্রতীক হয়ে আছে। স্থানীয় মানুষ মনে করেন, সরকারের গোপন প্রচেষ্টা হলো এই বিশাল সমাবেশকে দুর্বল করে দেওয়া, যাতে সাধারণ মানুষের ধর্মীয় আবেগকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা না যায়।

এই ভয়ংকর ঘটনার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষ প্রশ্ন তুলছে—এমন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় প্রশাসন কেন আগে থেকে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিল না? কোথায় ছিল ট্রাফিক পুলিশ, কোথায় ছিল পর্যাপ্ত মেডিকেল টিম? অভিযোগ উঠছে, পরিকল্পিত গাফিলতির মাধ্যমে ঘটনাকে ভয়াবহ করে তোলা হয়েছে। সাধারণ মানুষের ধারণা, প্রশাসন যদি চাইলেই বিশৃঙ্খলা এড়ানো যেত। কিন্তু আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় কাজ করা কিছু মহল ইচ্ছাকৃতভাবেই দায়িত্ব পালন করেনি।

নিহত সাইফুল ইসলামের পরিবার এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না যে, তাদের প্রিয় সন্তান কেবল একটি ধর্মীয় শোভাযাত্রায় গিয়ে আর ফিরে আসবে না। আইয়ুব আলীর সন্তানরা ভেঙে পড়েছে শোকে। এ দু’টি পরিবারই সরকারের ব্যর্থতা আর গাফিলতির কাছে তাদের প্রিয়জনকে হারানোর দায় চাপাচ্ছে। শোকাহত এলাকাবাসী এখন একস্বরেই বলছে, এটা কেবল একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যা।

চট্টগ্রামের মানুষ বারবার প্রমাণ করেছে, জশনে জুলুস কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি তাদের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক পরিচয়ের প্রতীক। অথচ সেই শিকড়কেই আঘাত করতে আজ নেমেছে এক অদৃশ্য শক্তি। আওয়ামী লীগের ওপর এখন সরাসরি অভিযোগ উঠেছে—তারা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য সাধারণ মানুষের প্রাণকেও বাজি রাখতে দ্বিধা করেনি।

চট্টগ্রামের রাস্তায় এখনো আতঙ্কের ছাপ। নিহতদের পরিবার ন্যায়বিচার চাইছে, আহতরা জীবন মৃত্যুর দোলাচলে। কিন্তু প্রশ্ন একটাই—আওয়ামী লীগের এই অশুভ ছায়া কি কখনো উন্মোচিত হবে? নাকি আবারও সরকারি যন্ত্র পুরো ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে দেবে?

প্রতিবেদনঃ শফিকুর রহমান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *